দখিনের খবর ডেস্ক ॥ বঙ্গোপসাগরের জলসীমায় মৎস্য আহরনে বিরত থাকা জেলেদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের দূর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট সহ নানা বিতর্কের পর অবশেষে জেলে তালিকা যাচাই করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপসচিব আলমগীর হুছাইন স্বাক্ষরিত ২৮মে’র এ নির্দেশনায় আগামী ১৫জুন’র মধ্যে প্রকৃত জেলেদের তালিকা যাচাই করে মানবিক সহায়তা বিতরনের জন্য বলা হয়েছে।
এসংক্রান্ত নির্দেশনা পটুয়াখালী, কক্সবাজার, ভোলা, নোয়াখালী, ফেনী, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, চট্রগ্রাম লক্ষীপুর, বরগুনা ও পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তবে সেই দূর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধি ও মৎস্যবিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রকৃত জেলেদের তালিকা যাচাই নিয়ে সংশয় রয়েছে পেশাদার জেলেদের মধ্যে। কেননা কালো টাকা ও ভোটের রাজনীতি প্রভাব ফেলতে পারে জেলেদের তালিকা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে। এমন দাবী কুয়াকাটা উপকূলের জেলে সংগঠন গুলোর। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন রুপালী ইলিশ রক্ষায় সমুদ্রে সকল ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এসময় কর্মবিমূখ হয়ে পড়া প্রকৃত জেলেদের সরকার প্রথম কিস্তিতে ৫৬ কেজি করে মানবিক সহায়তা (চাল) দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য সমুদ্রগামী প্রকৃত জেলেদের তালিকা তৈরির জন্য বলা হয়েছে।
ইতোপূর্বে কার্ডধারী জেলেদের মধ্যে কেউ মারা গেছেন, কেউ ভুল তথ্য দিয়ে তালিকায় নাম সংযুক্ত করেছেন। কেউবা আবার নতুন করে এ পেশায় এসেছেন। কেউ আবার পেশা পরিবর্তন করেছেন। এসব কারণে সমুদ্রগামী প্রকৃত জেলেদের জন্য সরকারের মানবিক সহায়তা তুলে দিতে যাচাই বাছাইয়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাতে সরকার প্রদত্ত ভিজিএফ সুবিধা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায়। মৎস্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিগন এই তালিকা চুড়ান্ত করবেন। তবে এবারও জেলেদের তালিকা যাচাই নিয়ে উপকূলের জেলে সংগঠনগুলোর শংকা কতটা সঠিক সেটা দেখা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কেননা আর্থিক সুবিধা নিয়ে জেলে তালিকায় অন্তর্ভূক্তি ও সরকারী সেবা সুবিধা বিতরনের সাথে জড়িত বিতর্কিত অনেক জনপ্রতিনিধি যুক্ত থাকছেন প্রকৃত জেলেদের এ তালিকা যাচাইয়ের কাজে। যারা ইতোপূর্বে মৎস্য বিভাগকে ম্যানেজ করে প্রায় চার হাজার ভুয়া নাম জেলে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। কলাপাড়া উপজেলায় জেলেদের এ মানবিক সহায়তা জনপ্রতিনিধি কর্তৃক লুটপাট নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রথম দফায় মৎস্য কর্মকর্তা ও ২য় দফায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে তদন্ত হলেও রহস্যজনক কারনে অদ্যবধি অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলে জানা যায়নি। তবে কলাপাড়ায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১৮ হাজার ৫০০ জন। এর মধ্যে কার্ডধারী রয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ জন। এ তালিকায় প্রায় ৪ হাজার নাম রয়েছে
যারা প্রকৃত জেলে নয়। জেলেদের এ মানবিক সহায়তা নিয়ে কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর, ধূলাসার, কুয়াকাটা, রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, বড়বাইশদিয়া, ছোট বাইশদিয়া ও মৌডুবী ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা বহুল আলোচিত হয়ে ওঠেন। সরকারী চাল নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের লুটপাটের অভিযোগে জেলেদের মানববন্ধন ও লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কার্যক্রম পর্যন্ত পরিচালিত হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে সব ম্যানেজ। অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোন দৃশ্যমান অ্যাকশন নেই। যদিও দূর্নীতি ও অনিয়মে বিতরনকৃত জেলেদের মানবিক সহায়তার মাষ্টার রোলে জেলে নয় এমন ভিন্ন পেশার বহু মানুষের নাম দৃশ্যমান। যার তালিকা সংগ্রহে মৎস্যকর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পর কলাপাড়া মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা বলেন, তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী লিখিত আবেদন করতে হবে। যা অনুমোদনের পর আইন অনুযায়ী সরবরাহ করা গেলে দেয়া যাবে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৫৭ ও ২৮৯ ক্রমিকে রয়েছে আ’লীগ নেতা ও ছাত্রলীগ নেতার নাম। ২৯৭, ২৯৯ ক্রমিকে রয়েছে যুবলীগ নেতার নাম। ৪৬২ ক্রমিকে রয়েছে কৃয়াকাটার বিলাস বহুল এক আবাসিক হোটেল মালিকের নাম। এছাড়া তালিকায় অগনিত নাম রয়েছে যারা আদৌ জেলে নয় এবং যাদের কোন জেলে কার্ড নেই। তবুও তারা জেলে হিসেবে পেয়েছেন সরকারের সুবিধা। যদিও দাখিলকৃত তালিকায় এদের অনেককেই অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। যা নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগের পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সম্প্রতি তদন্ত করেছেন। এদিকে মৎস্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের দূর্নীতিযুক্ত তালিকায় সুবিধা বঞ্চিত প্রকৃত জেলেদের দাবি, জেলেদের তথ্য সংগ্রহকালে কে কোন ট্রলারের জেলে এসব সম্পুর্ণ তথ্য থাকা দরকার। এমনকি ট্রলারের নাম, মালিকসহ জেলের মোবাইল নম্বর পর্যন্ত প্রশাসনের তালিকায় থাকা প্রয়োজন রয়েছে বলেও জেলেদের দাবি। কলাপাড়া মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা বলেন, জেলেদের তালিকা যাচাই করার সরকারের আদেশ জনপ্রতিনিধিদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আ: বারেক মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ওয়ার্ড ভিত্তিকি যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত জেলের তালিকা পৌরসভায় জমা দিবেন। তাদের তৈরী কৃত তালিকা আবার যাচাই বাছাইয়ের জন্য মৎস্য কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত কমিটি যাচাই করবেন। তালিকায় অপেশাদারদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সূযোগ নেই বলে জানান তিনি।
Leave a Reply